Recents in Beach

#

পিআরএল (PRL) ও এলপিআর (LPR) সংক্রান্ত সকল তথ্য

সরকারি চাকরিজীবীদের অবসর জনিত সকল তথ্য

একজন চাকরিজীবী হিসেবে প্রত্যেকের কিছু কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো। তার মাধ্যে পিআরএল, ল্যাম্পগ্র্যান্ট, গ্রাচুইটি ছুটির হিসাব ইত্যাদি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রত্যেকেরই চাকরি শেষে এসব প্রয়োজন হয়। এসব বিষয় না জানলে অন্যের পিছনে পিছনে ঘুরতে হয়। বর্তমান ডিজিটাল যুগে অন্যের পিছনে ঘুরে সময় ও অর্থ ব্যয় করার কোন দরকার নেই। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনার এসব বিষয় সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতে পারবেন।


     পিআরএল (PRL) কি?

    পিআরএল (PRL) এর অর্থ হলো পোস্ট রিটারমেন্ট লিফ (Post Retirement Leave)  বা অবসর-উত্তর ছুটি। যা বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে। পূর্বে এক বছর ছুটি ভোগের পর একজন সরকারি কর্মচারী পূর্ণ অবসর গ্রহণ করতেন আর বর্তমানে একজন সরকারি কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর ০১ (এক) বছর ছুটি ভোগ করে থাকেন যা পিআরএল হিসেবে গন্য হয়। 


    পিআরএল (PRL) ও এলপিআর (LPR) এর মধ্যে পার্থক্য

    PRL=Post Retirement Leave (অবসর উত্তর ছুটি) যা বর্তমানে প্রচলিত। বর্তমানে একজন সরকারি কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর এক বছর ছুটি ভোগ করেন। পিআরএল ছুটিতে থাকা অবস্থায় অন্য চাকরিতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগেরও সুযোগ রয়েছে। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য ছুটি বাতিল সাপেক্ষে যোগদান করতে হয়। তাছাড়া বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই। 

    LPR= Leave Preparation for Retirement (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি) যা বর্তমানে প্রচলিত নেই। পূর্বে এক বছর ছুটি ভোগের পর একজন সরকারি কর্মচারী পূর্ণ অবসর গ্রহণ করতেন। এলপিআর ছুটিতে থাকা অবস্থায় অন্য চাকরিতে যাওয়ার সুযোগ ছিলনা। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগেরও সুযোগ ছিল না। তাছাড়া বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হতো। 

    তবে পিআরএল ও এলপিআর উভয় পদ্ধতিতেই ছুটিকালীন একজন কর্মকর্তা/কর্মচারী বারো মাসের মূল বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা, শিক্ষাভাতা (যদিথাকে) সব পেয়ে থাকেন। ছুটি শেষে পেনশন নির্ধারণের সময় একটি ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য হবেন। 


    ছুটি নগদায়ন সুবিধা কী?

    অবসর গ্রহণকালে অর্জিত ছুটি পাওনা সাপেক্ষে ১২ মাসের ছুটি নগদায়ন এর বিধান পরিবর্তন করে ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন অর্থাৎ ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রাপ্য হবেন। এক্ষেত্রে দুই দিনের অর্ধগড় বেতনে ছুটিকে ০১ দিনের গড় বেতনের ছুটিতে রূপান্তর করা যাবে। অবসর উত্তর ছুটিতে যাওয়ার সময়ের মূল বেতনের ভিত্তিতে উক্ত নগদায়ন সুবিধা অবসর উত্তর ছুটির শুরুতে প্রাপ্য হবেন। উল্লেখ্য যে, অবসর উত্তর ছুটি (PRL) ভোগ না করলেও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন। 


    লাম্প গ্র্যান্ট কী?

    চাকুরী শেষে সর্বশেষ মূলবেতন এর সাথে অর্জিত ছুটি (সর্বোচ্চ ১৮ মাস) গুন করে যাহা পাওয়া যায় তাহাই লাম্প গ্র্যান্ট।

    লাম্প গ্র্যান্ট হিসাব করার নিয়ম

    লাম্প গ্র্যান্ট হিসাব=চাকুরিতে সর্বশেষ মূলবেতন x চাকুরিতে অর্জিত ছুটি (সর্বোচ্চ ১৮ মাস)।

    উদাহরণ- করিম সাহেব ০৫/১২/১৯৮০ তারিখে চাকরিতে যোগদান করেছেন। তিনি ০১/০৬/২০১০ তারিখে অবসর গমন করেন। তার সর্বশেষ আহরিত মুল বেতন ২৩,৪৯০/- তাহলে তার প্রাপ্য  লাম্প গ্র্যান্ট হবে- ২৩৪৯০*১৮= ৪,২২,৮২০ টাকা।


    পিআরএল ও লাম্প গ্র্যান্টের আবেদন কখন করতে হবে

    পেনশন সহজীকরণ আইন ২০০৯ এর বিধি ২.০৬ অনুসারে ছুটি নগদায়ন ও অবসর উত্তর ছুটি বা পিআরএল আবেদন একটি নির্দিষ্ট সময় হাতে নিয়ে দাখিল করতে হয়। যাতে সময়মত মঞ্জুরী পাওয়া যায় এবং কর্মদায়িত্ব হতে অব্যাহতি পাওয়া যায়।


    (ক) সরকারি কোন কর্মচারী অবসর উত্তর ছুটিতে গমনের ১১ (এগারো) মাস পূর্বে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা/আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তা তাহার অবসর উত্তর ছুটিতে যাওয়ার অব্যবহিত পূর্বের তারিখে এবং চুড়ান্ত অবসর গ্রহণের অব্যবহিত পূর্বের তারিখের শেষ আরোহণযোগ্য প্রত্যাশিত শেষ বেতন উল্লেখ পূর্বক ইএলপিসি (ELPC) জারি করিবেন।

    (খ) আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তা কর্তৃক জারীকৃত নন-গেজেটেড কর্মচারীর ইএলপিসি (ELPC) সংশ্লিষ্ট হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ০৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিস্বাক্ষর করিবেন। 

    (গ) যে তারিখে পিআরএল (PRL) যাবেন তার এক মাস পূর্বে আবেদন করতে হবে। পিআরএল লাম্প গ্রান্টের আবেদন একসাথে করা যায় আবার আলাদা আলাদাও করা যায়।


    পিআরএল ও লাম্প গ্র্যান্টের আবেদন লেখার নমূনা 

    বরাবর,

    তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী,

    জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর,

    রংপুর সার্কেল, রংপুর।

    মাধ্যম: যথাযথ কর্তৃপক্ষ।

    বিষয় : অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল) ও লাম্পগ্র্যান্ট মঞ্জুরীর জন্য আবেদন। 

    জনাব,

    যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি মোঃ আব্দুল হামিদ, ভি.এস ম্যাশন, আপনার অধিনস্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, দেবীগঞ্জ উপজেলা, পঞ্চগড় কার্যালয়ে কর্মরত একজন নিয়মিত ম্যাশন। আমার জন্ম তারিখ : ১৫/০৩/১৯৬৪ খ্রি: (স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ী)। আগামী ১৪/০৩/২০২৩ খ্রি: তারিখে আমার বয়স ৫৯ (ঊনষাট) বছর পূর্ণ হবে। এমতাবস্থায় বিধি মোতাবেক আগামী ১৫/০৩/২০২৩ খ্রি: তারিখ হতে ১৪/০৩/২০২৪ খ্রি: তারিখ পযন্ত আমার অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল) ও লাম্পগ্র্যান্ট মঞ্জুরীর জন্য আবেদন করছি। 

    অতএব, বিধায় প্রার্থনা এই যে, বিধি মোতাবেক উপরোল্লিখিত তারিখ হতে আমার অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল) ও লাম্পগ্র্যান্ট মঞ্জুরী করতে জনাবের মর্জি হয়।   


    সংযুক্তি:

    ১। মূল চাকুরী বহি - ০১ খানা।

    ২। ইএলসিপি ফরম- ০২ কপি। 


    বিনীত নিবেদক

    আপনার একান্ত অনুগত কর্মচারী


    মো: আব্দুল হামিদ

    ভিএস ম্যাশন

    জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, 

    দেবীগঞ্জ উপজেলা, পঞ্চগড়।



    পিআরএল কাল পেনশনযোগ্য কি না?

    অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল) কাল পেনশনযোগ্য চাকরি কিনা, অবসর উত্তর ছুটি কালে আর্থিক সুযোগ সুবিধার প্রাপ্যতা এবং অবসরের তারিখ তারিখ, পিআরএল শুরুর তারিখ, চূড়ান্ত অবসর শুরুর তারিখ ইত্যাদি বিষয়সমূহ স্পষ্টীকরণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, প্রবিধি-১ শাখা এর প্রজ্ঞাপন তুলে ধরা হলো: 

    পি আর এল বিধিমালা

    পিআরএল বিধিমালা


    পিআরএল ও অবসরের তারিখ বের করার নিয়ম 

    প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীর চাকরি বিধিমালা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকা জরুরি। বিশেষ করে অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল), লম্পগ্র্যান্ট ও গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিক ইত্যাদি। যাতে আপনি নিজেই অবসরের তারিখ বের করে নিতে পারেন। 

    গণকর্মচারী অবসর বিধি অনুযায়ী বয়স ৫৯ (উনষাট) এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ৬০(ষাট) বৎসর পূর্তিতে অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হয়। অর্থাৎ সাধারণ চাকরিজীবীদের তাদের জন্মতারিখের সাথে ৫৯ বছর যোগ করলে এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে ৬০ বছর যোগ করলে অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরুর তারিখ পাওয়া যাবে। 

    উদাহরন- কারো জন্ম তারিখ যদি ০১/০১/১৯৯০ হয়  তাহলে তার পিআরএল শুরুর তারিখ হবে ০১/০১/২০৪৯ এবং শেষ হবে ০১/১২/২০৪৯ তারিখে। তার চুড়ান্ত অবসর গ্রহণের তারিখ হবে ০১/০১/২০৫০। 

    পিআরএল শুরুর ০৩ (তিন) মাস পূর্বে পিআরএল মঞ্জুরীর আবেদন দাখিলের বিধান রয়েছে। ফলে অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল) সহ লাম্পগ্রান্ট মঞ্জুরীর নিমিত্ত নিম্নেবর্ণিত কাগজপত্রাদি/তথ্যাদিসহ পিআরএল শুরুর তারিখের কমপক্ষে ০৩(তিন) মাস পূর্বে যথাযথভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে।


    পিআরএল ও লাম্প গ্র্যান্ট মঞ্জুরিতে যে সকল কাগজ প্রয়োজন

    ১. পিআরএল ও লাম্প গ্র্যান্ট মঞ্জুরির আবেদন।

    ২. সংশ্লিষ্ট হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা প্রতিস্বাক্ষরিত ছুটির হিসাব সম্বলিত প্রত্যাশিত শেষ বেতনের সনদ (ইএলপিসি) এর মূল কপি ও ২ কপি ফটোকপি।

    ৩. শিক্ষাগত সনদপত্রের ফটোকপি।

    ৪. সাভিস বহি।

    ৫. ১ম শ্রেণি হিসেবে চাকরিকালীন সকল কর্মস্থলের নির্ধারিত প্রত্যয়ন পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। তবে সর্বশেষ কর্মস্থলের প্রত্যয়ন পত্র অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে- ২(দুই) সেট। কোন সরকারি পাওনা, টেলিফোন বিল, বিদ্যুৎ বিল, বাড়ী ভাড়া, অগ্রিম ঋণ, যানবাহন সংক্রান্ত দায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় মামলা, ফৌজদারী মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা, বিচার বিভাগীয় মামলা, দুদকের মামলা ও কোন অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তি থাকা/না থাকার বিষয় প্রত্যয়ন পত্রে উল্লেখ করতে হবে(টেলিফোন বিল, বাড়ী ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল, পৌর কর, অগ্রিম ঋণ/সুদ বকেয়া আছে কি না এবং সরকারি বাসায় বসবাসকারীর ক্ষেত্রে বাসা ভাড়া বকেয়া থাকলে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে)।


    কতদিন ছুটি পাওনা থাকলে পিআরএল ভোগ করা যায়?

    পিআরএল ভোগের জন্য অবশ্যই ১২ মাসের ছুটি জমা থাকতে হবে। লাম্পগ্র্যান্ট বা পূর্ণ ছুটি বিক্রির টাকা পেতে ১৮ মাস ছুটি এবং পিআরএল ভোগের জন্য ১২ মাস ছুটি সহ সর্বমোট ৩০ মাসের ছুটি জমা থাকতে হবে। যদি কারো ১২ মাসের পিআরএল ছুটির পর ১০ মাস ছুটি জমা থাকে তবে ১০ মাসের লাম্পগ্র্যান্ট বা ছুটি বিক্রির টাকা পাওয়া যাবে। যদি কোন ছুটিই জমা না থাকে তবে পিআরএল বা লাম্পগ্র্যান্ট কোনটিই পাওয়া যাবে না।


    অর্জিত ছুটি হিসাব করার নিয়ম
    পিআরএল ছুটির হিসাব

    সরকারি কর্মচারী ছুটির বিধান অনুযায়ী একজন স্থায়ী কর্মচারীর প্রতি ১১ দিনে ১ দিন পূর্ণগড় বেতনে ছুটি এবং প্রতি ১২ দিনে একদিন অর্ধ গড় বেতনে অর্জিত ছুটি তার হিসাবে জমা হয়। মোট সময়কালকে ১১ দিয়ে ভাগ দিলে পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি এবং ১২ দিয়ে ভাগ দিলে অর্ধ গড় বেতনে ছুটি পাওয়া যায়। 

    ধরে নেই কোন কর্মচারী এক বছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিন চাকরি করেছেন। এক্ষেত্রে তার ছুটি হবে নিম্নরূপ:

    ৩৬৫ দিনকে ১১ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে =৩৩ দিন পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি

    ৩৬৫ দিনকে ১২ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে =৩০ দিন অর্ধ গড় বেতনে ছুটি

    এক্ষেত্রে মোট কর্মদিন থেকে ছুটির হিসাব নির্নয়ের ক্ষেত্রে যদি দশমিক আসে সেক্ষেত্রে যদি দশমিকের পরে ৬ এর অধিক হয় তবে অতিরিক্ত একদিন ছুটি হিসাব করতে হবে।


    আরো পড়ুন

    বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ফরম ডাউনলোড

    জাতীয় পে-স্কেল গেজেট (১৯৭৩-২০১৫)

    বহি: বাংলাদেশ ছুটির আবেদন লেখার নিয়ম

    অর্জিত ছুটির হিসাব সার্ভিস বইয়ে লেখার নিয়ম


    লেখা সম্পর্কে কোন মতামত বা নতুন কোনো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজে ফলো করে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারবেন। ধন্যবাদ।

     




    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ