Recents in Beach

#

প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই নিশ্চিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করার কৌশল!

 

প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই নিশ্চিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করার সহজ কৌশল!

কোচিং ছাড়াই নিশ্চিত শিক্ষক নিবন্ধন পাশ!

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA) দেশের প্রায় ৩৬ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। ২০০৫ সাল থেকে NTRCA শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষক/প্রভাষক নিবন্ধন পরীক্ষা চালু করে।এর ধারাবাহিকতায় ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তি ২০২৩ প্রকাশ করে যার  প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে। আজকে আমরা আলোচনা করব কীভাবে প্রস্তুতি নিলে আপনি কোচিং বা বিভিন্ন বইয়ের পিছনে না ঘুরেই জীবনের প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই নিশ্চিত শিক্ষক নিবন্ধন পাস করতে পারবেন।


    >

    শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলি প্রস্তুতি

    শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পাস করা খুব কঠিন কিছু নয়। প্রিলি পরীক্ষা ১০০ নম্বরের হয়ে থাকে। যার মধ্যে বাংলা-২৫, গণিত-২৫, ইংরেজি-২৫ এবং সাধারণজ্ঞান-২৫ নম্বরের। মজার ব্যাপার হলো ১০০ এর মধ্যে মাত্র ৪০ নম্বর পেলেই আপনি প্রিলিতে টিকবেন। তাই এর জন্য বিভিন্ন গাইট বইয়ের ১০০০-১২০০ পৃষ্ঠা মুখস্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। চলুন দেখেনেই সহজে ৪০-৫০ নম্বর পাওয়ার কৌশল।


    ১। NTRCA বিগত সালের প্রশ্ন মুখস্থ করাঃ বিগত কয়েক বছরের নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষন করলে দেখা যায় প্রতিটি পরীক্ষায় বিগত  সালের প্রশ্ন হতে বেশ কিছু প্রশ্ন রিপিট হয়। তাই প্রথমেই আপনাকে ১০ম হতে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধর পরীক্ষার সকল প্রশ্ন ভালোভাবে আয়ত্ব করতে হবে। যাতে রিপিট প্রশ্ন হলে সহজেই উত্তর করতে পারেন। আবার এর মাধ্যমে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।

    ২। বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন মুখস্থ করাঃ বিসিএস এর প্রশ্নকে বলাহয় আদর্শ প্রশ্ন। যেকোনো পরীক্ষায় বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্ন হতে কিছু প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়।তাই অন্তত পক্ষে বিসিএস প্রিলির ৩০তম হতে ৪৪তম পর্যন্ত বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণজ্ঞান অংশ ভালোভাবে পড়তে হবে।


    ৩। শিক্ষক নিবন্ধন সিলেবাস: NTRCA ওয়েবসাইট হতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সিলেবাসটি ডাউনলোড করে নিয়ে সেটি ভালোভাবে দেখতে হবে। তারপর সেই সিলেবাস অনুযায়ী বিগত সালেব প্রশ্নগুলো দেখতে যে কোন কোন টপিক হতে বেশি প্রশ্ন হয়েছ, সেগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিতে সাধারণত বেসিক বিষয়গুলো থেকে বেশি প্রশ্ন করা হয়। তাই বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের সাধারণ বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।নিম্নের টপিকগুলো থেকেই বেশি প্রশ্ন হয়, তাই সেগুলো গুরুত্বসহকারে পড়ুন।


    বাংলা
    ভাষারীতি, যতি বা বিরামচিহ্ন,কারক-বিভক্তি, সমাস, প্রত্যয়, সন্ধি, এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাক্য সংকোচন, লিঙ্গ পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। সাহিত্য হতে ২-৩ টি প্রশ্ন হয়ে থাকে। কিন্তু এর জন্য অনেক পড়তে হবে। আপনি যদি ব্যাকরণিক বিষয়গুলো পড়ার পরে সময় পান তাহলে সাহিত্য পড়ুন নতবা বাদ দিতে পারেন। বাংলা প্রস্তুতির জন্য আপনি নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বই থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন। অথবা এমপি-৩, প্রফেসরস বা আপনার পছন্দের যেকোনো একটি সিরিজ থেকে পড়তে পারেন।

    গণিত
    গড়, ল.সা.গু,গ.সা.গু, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, লাভক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত, উৎপাদক বিশ্লেষন,বর্গ ও ঘনসম্বলিত সূত্রাবলি ও প্রয়োগ, সূচক লগারিদম, জ্যামিতি-রেখা, কোণ,ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত সম্পর্কিত সাধারণ ধারণা ও নিয়ম ইত্যাদি ভালোভাবে পড়তে হবে। গণিত প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন। অথবা এমপি-৩, খাইরুলস বেসিক ম্যাথ, ম্যাজিক ম্যাথ বা আপনার পছন্দের যেকোনো একটি সিরিজ থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন।

    ইংরেজি
    Completing Sentence, Translation, Right forms of Verb, Change of parts of speech, Voice Change, Transformation of sentences, Synonyms & Antonyms, Idioms & Phrases   বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। ইংরেজি প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম Grammar বই থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন। অথবা এমপি-৩, English for Competitive Exam বা আপনার পছন্দের যেকোনো একটি সিরিজ থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন।

    সাধারণজ্ঞান
    সাধারণজ্ঞান প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করাই ভালো। মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এবং দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে তাহলে সাধারণজ্ঞানের প্রস্তুতি অনেকাংশে হয়ে যাবে। সেইসাথে বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। কারণ সাধারণজ্ঞান প্রশ্ন যদি সহজ হয় তাহলে সবাই মোটামুটি একটা মার্ক পেয়ে থাকে। আবার কঠিন হলে অনেক প্রস্তুতি নিয়েও তেমন ভালো মার্ক পাওয়া যায়না।তাইবলে সাধারণজ্ঞান একেবারেই বাদ দেওয়া যা্বেনা।
    উপরের বিষয়গুলো যদি আপনি ভালোভাবে পড়েন তাহলে আপনি খুব সহজেই শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিতে ভালো মার্কসহ পাস করতে পারবেন।

    শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

    বর্তমানে শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষায় পাস করা পূ্র্বের তুলনায় কিছুটা কঠিন হয়ে গেছে। অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েও অনেক সময় রেজাল্ট আসেনা। কারণ বর্তমানে পদসংখ্যা শুন্য থাকা সাপেক্ষে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো হয়। তবে হতাশ হওয়া যাবেনা। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে কৌশলে যাতে সহজেই পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া যায়। আর লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই জাতীয় মেধাক্রম তৈরি করা হয় এবং গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাই লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক।


    লিখিত পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার কৌশল:

    • শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার সময় হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ কথায় আছে আগে দর্শনধারী পরে গুনবিচারী। হাতের লেখা সুন্দর হলে সহজেই পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, যা বেশি নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
    • প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় কোটেশন বা উক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক রেফারেন্স সহ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কোনোভাবেই রেফারেন্স ভুল করা যাবেনা। অনেকের ধারণা যিনি খাতা মূল্যায়ন করেন তিনি হওতো এতো খুটিনাটি বিষয় খেয়াল করেননা। কিন্তু সেই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কেননা, এক্সপার্ট শিক্ষকগণই আপনার খাতা মূল্যায়ন করবেন এবং তাদের নিকট খুব সহজেই সেই ভুলগুলো ধরা পড়বে।
    • লিখিত পরীক্ষা যেহেতু আপনার অনার্স বা ডিগ্রীর পঠিত বিষয়ের উপরে হবে, তাই সে বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিবেন। প্রশ্ন উত্তর লেখার সময় ভালোভাবে প্রশ্ন দেখে বুঝে তারপরে লিখবেন। ভুল বা মনগড়া উত্তর লিখা থেকে বিরত থাকতে হবে।
    • প্রশ্ন উত্তর সবসময় পয়েন্ট আকারে লেখার চেষ্টা করবেন। এতে বেশি নম্বর পাওয়া যায়।পয়েন্ট লেখার সময় হাইলাইট করার জন্য সবুজ বা নীল রং এর কলম ব্যবহার করতে পরেন।
    • উত্তর লেখার শুরুতেই প্রশ্নের মার্ক অনুয়ায়ী সময় বন্টন করে নিবেন কোন প্রশ্নের জন্য কত সময় ব্যয় করবেন। তানা হলে সকল প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ করতে পারবেন না বা শেষের দিকে প্রশ্নের উত্তর যথাযথ দিতে পারবেননা। 
    • প্রশ্নে বিতর্কিত কোনো বিষয় যেমন- দেশ বা সমাজ বিরোধী, ধর্মীয় উস্কানিমূলক, রাজনৈতিক বিষয় থাকলে সেসব প্রশ্নের উত্তর খুব সাবধানে কৌশলে দিবেন। যেন আপনার সম্পর্কে পরীক্ষকের কোনো নেতিবাচক ধারণা তৈরি না হয়।

    শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা প্রস্তুতি

    আমাদের মধ্যে অনেকেরই ভাইভার নাম শুনলেই গলা শুকিয়ে যায়। নার্ভাস হয়ে পড়ি। যার ফলে অনেক জানা বিষয়ও ভুলে যাই এবং ব্যর্থ হই সেই কাঙ্খিত ধাপটি পার করতে। কিন্তু শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা নিয়ে এত বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভায় মোট নম্বর থাকে ২০। এর মধ্যে একাডেমিক সনদের জন্য ১২ নম্বর এবং ভাইভা  বোর্ডের হাতে থাকে ৮ নম্বর। 

    স্কুল এবং কলেজ উভয় পর্যায়ে পাশ নম্বর হচ্ছে শতকরা ৪০। যদি সনদপত্র বা অন্যান্য কোনো তথ্যগত ভুল না থাকে তাহলে অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেলেই চলে। তবে নিজের একাডেমিক বিষয়ে ভালো ধারণা রাখতে হবে এবং ভাইভা বোর্ডের সাধারণ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে আপনি নিশ্চিত কৃতকার্য হবেন।

    পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা তিনটি ধাপই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনটি ধাপই সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে শিক্ষক নিবন্ধন বা শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়া মাত্রই কিছু অসাধু কোচিং ব্যবসায়ী তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকারদের অর্থ ও সময়ের অপচয় ঘটাচ্ছে। 

    আবার কিছু প্রকাশনীও প্রচার প্রচারণা চালায় অমুক বই পড়ুন ১০০% কমন, তমুক বই কিনুন ৯০% কমন ইত্যাদি। কিন্তু শিক্ষক নিবন্ধন সিলেবাস ভালোভাবে দেখেশুনে প্রস্তুতি নিলে কোচিং বা বিভিন্ন বইয়ের পিছনে না ঘুরেই আপনি সহজেই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন। 



    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ