বর্তমানে বিভিন্ন সরাকারি চাকরির পরীক্ষায় কম্পিউটার জানা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ করে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহকারী, হিসাব সহকারী, হিসাব রক্ষক, ক্লার্ক কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট, ডাটা এন্ট্রি অরারেটর, ইত্যাদি পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পরে টাইপিং টেস্ট নেওয়া হয়।
আর এটা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক ভীতি থাকে। কী কী থাকে টাইপিং টেস্ট পরীক্ষায়? কীভাবে নেওয়া হয় টাইপিং গতি পরীক্ষা? কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাস করা যায়? কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষার প্রশ্ন কেনম? অ্যাপটিচিউট টেস্ট কী? এরকম আরও অনেকপ্রশ্ন ঘুরপাক খায়। চলুন আজ জেনে নেই এসব প্রশ্নের উত্তর।
- যেভাবে নেওয়া হয় কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষা
- Standard Aptitude Test
- সফটওয়্যার এর মাধ্যমে টাইপিং গতি পরীক্ষা
- ওয়ার্ড ফাইলে টাইপিং গতি পরীক্ষা
- বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে ব্যবহারিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা
- কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাশ করার জন্য যা করবেন
- টাইপিং গতি বৃদ্ধি করার কৌশল
- টাইপিং গতি কত হলে পাশ করবেন
- কম্পিউটার ব্যবহাকির পরীক্ষার প্রশ্ন pdf
যেভাবে নেওয়া হয় কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষা
Standard Aptitude Test
সরকারি তৃতীয় শ্রেনির চাকরির কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষায় শুধুমাত্র টাইপিং গতি দেখা হয়। অন্য কিছু যেমন এক্সেল, এক্সেস, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেনটেশন ইত্যাদি কিছুই দেখা হয়না। তাই ভয়ের কিছু নেই। এসব পদে কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষা বা অ্যাপটিচিউট টেস্ট সাধারণত দুই ভাবে নেওয়া হয়। সফটওয়্যার এর মাধ্যমে অথবা সরাসরি কোনো ওয়ার্ড ফাইল তৈরি করে সেখানে টাইপিং এর মাধ্যমে। বিভিন্ন দপ্তর বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তবে কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক পরীক্ষা নেওয়া হলে তারা সফটওয়্যার এর মাধমে পরীক্ষা নিয়ে থাকে।
সফটওয়্যার এর মাধ্যমে টাইপিং গতি পরীক্ষা
সফটওয়্যার এর মাধ্যমে টাইপিং গতি পরীক্ষা সাধারণত ওয়ার্ড ফাইলে টাইপিং পরীক্ষার এর তুলনায় কিছুটা কঠিন। কারণ এতে ভুল টাইপিং করলে তা সংশোধনের কোন সুযোগ নাই। এমনকি আপনি যদি একটি স্পেসও বেশি দেন সেটিও ভুল হিসেবে কাউন্ট করা হয়। তাই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়ার সময় খুব সাবধানে নির্ভুল ভাবে টাইপ করতে হবে।
টাইপিং গতি পরীক্ষা মূলত ৫ মিনিট বা ১০ মিনিট সময়ের হয়। এটি বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি ছোট রচনা আপনাকে হুবুহু টাইপ করতে হবে। এর জন্য আপনাকে একটি হার্ডকপি দেওয়া হবে যা দেখে দেখে টাইপ করতে পারবেন অথবা মনিটরের উপরের অংশে রচনাটি দেওয়া থাকবে সেটি দেখেও টাইপ করেতে পারবেন। এক্ষেত্রে একটি সফটওয়্যার ওপেনে করে দেওয়া হবে সেখানে আপনার নাম ও রোল লিখে তারপর স্টার্ট বাটনে ক্লিক করলে আপনার সময় শুরু হবে এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে উক্ত সফটওয়্যার সংয়ক্রিয় ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
ওয়ার্ড ফাইলে টাইপিং গতি পরীক্ষা
কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার এটি একটি পুরাতন পদ্ধতি। ওয়ার্ড ফাইলে টাইপিং গতি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও আপনাকে একটি প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে যাতে বাংলা ও ইংলিশ দুটি ছোট রচনা থাকবে। দপ্তর ভেদে টেস্ট নেওয়া হয় ৫ মিনিট বা ১০ মিনিট। ৫ মিনিট বলতে ৫ মিনিট ইংলিশ ও ৫ মিনিট বাংলা টাইপ করতে হবে। এসময় পরীক্ষকগণ শুরু করতে বললেই লেখা শুরু এবং বন্ধ করতে বললেই লেখা বন্ধ করতে হবে। ১০ মিনিটের ক্ষেত্র একই, এক্ষেত্রে শুধু বাংলা ১০ মিনিট ও ইংরেজি ১০ মিনিট মোট ২০ মিনিট টাইপ করতে হয়। তবে প্রশ্নপত্রের শব্দ গুলো একেবারে সহজ থাকেনা। যুক্তবর্ণ সহ প্রায় সকল প্রকার বানান রীতির শব্দ থাকে।
এক্ষেত্রে পরীক্ষকগণ আপনাকে নির্দেশনা দিয়ে দিবে। আপনাকে প্রথমে ডেস্কটপের উপর একটি ওয়ার্ডফাইল খুলতে হবে এবং ওয়ার্ডফাইলটির নাম দিতে হবে আপনার রোল নাম্বার। মনে রাখবেন ফোল্ডার নয় ফাইল। যদি কোন দপ্তর ফোল্ডার খুলতে বলে তবে তা করতে হবে। কিন্তু সাধারণত কোথাও বলেনা। এরপর ফাইলটি ওপেন করে রেডি হয়ে বসে থাকতে হবে।
পরীক্ষকগন টাইপ শুরু করতে বললেই প্রথমে নাম, পদের নাম, ও রোল নাম্বার লিখতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি মূল সময়ের সাথে যুক্ত। অর্থাৎ এর জন্য আলাদা সময় দেওয়া হবেনা। খুব কম ক্ষেত্রে ওরা আগে লিখে রাখতে বলে। তবে এটি আশা না করাই ভাল।
এবার প্রশ্ন অনুযায়ী টাইপ শুরু করতে হবে। এখানে আগে বাংলা টাইপ করবেন নাকি আগে ইংলিশ সেটা আপনার ব্যাপার। কোন সমস্যা নাই তবে সময় শেষ হলেই লেখা বন্ধ করতে হবে। মনে রাখবেন বাংলা ইংলিশ মিলিয়ে কিন্তু সময় নয়। বাংলার জন্য আলাদা, ইংলিশের জন্যও আলাদা টাইম।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে ব্যবহারিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে ব্যবহারিক পরীক্ষা দেওয়া সবার কাছে এক মনেহয়না। কেউ এখানে পরীক্ষা দিতে খুব স্বাচ্ছন্দ বোধ করে আবার কেউ এখানে প্রাকটিক্যাল দেওয়ার কথা শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি নিজেও এখানে প্রাকটিক্যাল দেওয়ার আগে খুবই ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ব্যবহারিক পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে কম্পিউার কাউন্সিলে প্রাকটিক্যাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়।
আমি যতগুলো কম্পিউার ব্যবহারিক পরীক্ষা দিয়েছি তার মধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কম্পিউটার ল্যাব ও পরীক্ষা পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এখানে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখে টাইপ করতে পারবেন অথবা হার্ডকপি দেখেও টাইপ করতে পারবেন। এখানকার কীবোর্ড এর মান অনেক ভালো তবে কীবোর্ডে বাংলা লেখা থাকেনা। বাংলা লেখার জন্য ইউনিকোড ব্যবহার করতে হয়। এখানে পরীক্ষা দেওয়ার সবচেয়ে ভালো দিক হলো কোনোরকম অসদুপায় অবলম্বন করার সুযোগ এখানে নেই।
অনেকে বলে থাকে অনেক জটিল ও যুক্তবর্ণ লিখতে হয়। কিন্তু আমার কাছে তা মনেহয়নি। স্বাভাবিক শব্দগুলোই ছিল। তাই স্বাভাবিক শব্দগুলোই বেশি বেশি টাইপিং করার অভ্যাস করতে হবে। সব সময় চেষ্টা করবেন নির্ভুল টাইপ করার। কারণ ৫% এর বেশি ভুল করলে আপানার স্পিড যত বেশিই হোকনা কেন আপনি ফেল করবেন। সকলের জন্য শুভ কামনা।
কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাশ করার জন্য যা করবেন
কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষা বা টাইপিং গতি পরীক্ষায় পাশ করতে হলে দ্রুত ও নির্ভুল টাইপ করতে হবে । আপনি নির্ধারিত সময়ে যা টাইপ করলেন তা যেন মিনিটে চাওয়া সময়ের চেয়ে বেশি শব্দ হয়। লেখার সময় যে শব্দটি লিখছেন সেটিতে কোন একটি ভূল শব্দ চাপ পড়লে সাথে সাথে মুছে কারেক্ট করতে পারবেন। কিন্তু দুটো তিনটি শব্দের পেছনে যেটি টাইপ করা হয়ে গেছে সেটি ভুল থাকলে সংশোধন করতে পারবেন না। যদি পরীক্ষকগণ দেখতে না পায় তবে করতেই পারেন। অনেক ক্ষেত্রে ওনারা নিষেধ করে থাকেন ।
তবে সফটওয়্যার এর ক্ষেত্রে আপনি কোনো ভুল সংশোধনের সুযোগ পাবেন না। তাই সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বানান সঠিক হয়। ৫% এর বেশি বানান ভূল থাকলে যত বেশিই টাইপ করুন না কেন ফেল হবে। তাই অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল না করে কিছুটা ধীরে সঠিক ভাবে টাইপ করার চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য আপনাকে আগেথেকে প্রচুর টাইপিং চর্চা করতে হবে। চর্চা করার সময় অবশ্যই ইউনিকোড-এ লেখার অভ্যাস করতে হবে। কারণ বাংলা লেখার ক্ষেত্রে আপনাকে ইউনিকোডে লিখতে হবে।
টাইপিং গতি বৃদ্ধি করার কৌশল
টাইপিং গতি বৃদ্ধির আসল উপায় হলো প্রাকটিস করা। আপনি যতো প্রাকটিস করতে পারবেন, ততোই আপনার টাইপিং স্পিড বাড়বে। তাই টাইপিং গতি বৃদ্ধি করতে হলে নিয়মিত প্রাকটিশের কোনো বিকল্প নেই। টাইপিং গতি বৃদ্ধির জন্য নিম্নের কৌশলগুলো মেনেচললে খুব সহজেই গতি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
১. সঠিক পজিশনে বসে টাইপ করা
২. কী-বোর্ডেরে লে-আউট মুখস্থ করা
৩. কী-বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে লেখার অভ্যাস করা
৪. আঙ্গুলের পজিশন সঠিকভাবে রেখে প্রাকটিশ করা
৫. কী-বোর্ডের সর্টকার্ট নিয়মগুলো শিখে নেওয়া
৬. বিভিন্ন টাইপিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা
৭. নিয়মিত ২-৩ ঘন্টা টাইপিং প্রাকটিশ করা।
বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে আপনি আপনার টাইপিং গতি পরীক্ষা করতে পারেন। এর মধ্যমে আপনি আপনার অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন। তবে সব সময় চেষ্টা করবেন নির্ভূল ভাবে লেখার। আপনাদের সুবিধার্থে কিছু ওয়েবসাইটের লিস্ট দিয়ে দিলাম যেখানে আপনি স্পীড টেস্ট প্রাকটিশ করতে পারেবন।
https://typingtop.com/bengali/typing-test
https://hindityping.info/bengali-typing-test-inscript/
https://www.speedtypingonline.com/typing-test
এছাড়াও অনেক ওয়েবসাইট আছে। যেগুলো আপনি গুগলে সার্চ করার মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। সেগুলো থেকে নিয়মিত প্রাকটিশ করুন। তাহলে অবশ্যই আপনার টাইপিং গতি বৃদ্ধি পাবে।
টাইপিং গতি কত হলে পাশ করবেন
কম্পিউটার টাইপিং পরীক্ষায় পাস করতে কত শব্দ লাগবে তা মূলত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকে। আমাদের দেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণত মিনিটে ২০ থেকে ৩০ শব্দের গতি হলেই চলে। তবে প্রফেশনাল মানের কাজের ক্ষেত্রে আপনার টাইপিং গতি মিনিটে ৪০ শব্দের বেশি হতে হবে।
এখন ধরুন চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া হয়েছে মিনিটে ২৫ শব্দ তাহলে ৫ মিনিটে ১২৫ আর ১০ মিনিট থাকলে ২৫০ শব্দ হবে। এখন পরীক্ষকগন চেক করার সময় অটো সফটওয়ারে কাউন্ট হয়ে যায় যে কতগুলো শব্দ টাইপ করেছেন। কাজেই ৫ মিনিটে ১২৫ ও ১০ মিনিটে ২৫০ শব্দের বেশি পেলেই তারা পাশের খাতায় রেখে দেয়।
এবার ফাইল প্রিন্ট করে ওনারা আপনার একটি সিগনেচার নিয়ে পরীক্ষা শেষ করে দেন। এখন প্রিন্টেড কপি ওনারা ম্যানুয়াল দেখেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা। সবকিছু ঠিক থাকল চুড়ান্ত রেজাল্ট শীটে আপনি পাশ করে যাবেন।
কম্পিউটার ব্যবহাকির পরীক্ষার প্রশ্ন pdf
সম্পতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের ব্যবহারিক পরীক্ষা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল গ্রহণ করেছেন। আপনাদের সুবিধার জন্য সেরকম একটি নমুনা দেওয়া হলো যা দেখে দেখে আপনারা প্রাকটিশ করতে পারবেন।
0 মন্তব্যসমূহ