Recents in Beach

#

চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় সফল হওয়ার সেরা উপায়

viva-guidline


মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য সাধারণ কিছু প্রশ্ন-উত্তর

ভাইভা সম্পর্কে প্রত্যেকের মনে একটি ভয় কাজ করে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই ভাইভার নাম শুনলেই গলা শুকিয়ে যায়। নার্ভাস হয়ে পড়ি। যার ফলে অনেক জানা বিষয়ও ভুলে যাই এবং ব্যর্থ হই সেই কাঙ্খিত ধাপটি পার করতে। আজকে আমি আলোচনা করব মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি ও খুটিনাটি সব বিষয় নিয়ে। যে সব বিষয় সঠিক ভাবে মেনে চললে ভাইভায় সফল সম্ভাবনা শতভাগ।


মৌখিক পরীক্ষা বা VIVA কী?

মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভা হল যে কোনো চাকরির চুড়ান্ত ধাপ। "VIVA" একটি ইটালিয়ান (Italian) শব্দ যা Latin phrase: "Viva Voce" (ভাইভা ভৌসি) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। VIVA (ভাইভা) এর বাংলা অর্থ: মৌখিক পরীক্ষা। যে ধাপ পার করতে পালতে আপনি হতে পারেন সফল। মুক্তি মিলে বেকারত্বের অভিশাপ হতে। তাই ভাইভার জন্য প্রস্তুতিও নিতে হবে ভালোভাবে। 


মৌখিক পরীক্ষায় কীভাবে সফল হওয়া যায়?

মৌখিক পরীক্ষায় সফল হতে হলে প্রথমে আপনার ভয়কে জয় করতে হবে। আপনার মনের ভিতরে মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইবা নিয়ে যা ভয়-ভীতি আছে তা দূর করতে হবে। চেহারার মধ্যে যেন কোনো ভয় এবং ক্লান্তির চিহ্ন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভয় ও ক্লান্তি আপনার জানা বিষয়গুলোকেও ভূলিয়ে দেয়। পরীক্ষকের সব প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে যে প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা নেই সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে বিনয়ের সাথে দুঃখিত এই মহুর্তে মনে করতে পারিছিনা বা জানানেই বলতে পারেন। তবে কোনো ভাবেই মনগড়া, অপ্রাসঙ্গিক বা ভূল উত্তর দেওয়া যাবেনা। অনেকে ভাইভায় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় মাথা নিচু করে বা বাইরের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়ে থাকেন। একটিও একদম উচিৎ না। সবসবয় পরীক্ষকের দিয়ে তাকিয়ে হাসিমুখে উত্তর দিতে হবে।

বার বার পড়ার পরেও যারা পড়া ভূলে যান তাদের জন্য টিপস


মৌখিক পরীক্ষার জন্য কী কী পড়তে হবে?

মৌখিক পরীক্ষার নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তাই কী ধরনের প্রশ্ন করবে তা বলা যাবেনা। সেটা সম্পুর্ণ নির্ভর করে পরীক্ষকের উপর। তবে সাধারণত যে ধরনের প্রশ্ন করা হয় তার জন্য কী পড়বেন তা নিচে তুলে ধরা হলো।

১. নিজের নামের যদি কোন অর্থ থাকে এবং সেই নামের কোন বিখ্যাত ব্যক্তি থাকলে তার সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা রাখতে হবে।
২. নিজের এলাকা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। বিখ্যাত ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, দর্শনীয়স্থান, কিসের জন্য বিখ্যাত, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার ইত্যাদি।
৩.  যে প্রতিষ্ঠানে ভাইভা দিতে যাবেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং যে পদের জন্য ভাইভা দিবেন সে পদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে জানতে হবে।
 ৪. আপনি যে বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করেছেন সে বিষয়ে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
৫. মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণজ্ঞান: মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণজ্ঞানের জন্য বাংলাদেশের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু এবং সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখাতে হবে। এজন্য আপনি দৈনিক পত্রিকা ও মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন।
৭. ভাইভায় নিজের সম্পর্কে বলা : মৌখিক পরীক্ষায় আপনার নিজের সম্পর্কে বলতে বললে কি বলবেন তা গুছিলে বলা শিখুন। এক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা, শক্তির জায়গা, দুর্বলতা, পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে গুছিয়ে বলার অভ্যাস করুন
৮. মৌখিক পরীক্ষায় ইংরেজি: অনেকক্ষেত্রে ভাইভার সময় আপনাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ইংরেজিত উত্তর দিতে হবে। তাই ইংরেজিতে কথা বলার প্রাকটিশ করুন।
৯. বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখুন। বিশেষ কোনো কবিতা আবৃত্তি করার অভ্যাস করুন। অনেক ক্ষেত্রে ভাইভায় কবিতা আবৃত্তি করতে বলেন।
১০. আপনি যদি নৃত্য বা গান পারেন তাহলে তা আপনার জন্য অবশ্যই একটি অতিরিক্ত যোগ্যতা। অনেক ক্ষেত্রে ভাইভায় গান গাইতে বলে থাকেন।


ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করার নিয়ম

আপনার ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের সিরিয়াল যখন আসবে তখন সুন্দর ভাবে ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা একটু খুলে আসতে পারি স্যার বলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ করার পর সুন্দর ভাবে সালাম বা আদাব দিতে হবে। আবার ভাইভা শেষে পরীক্ষকগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে সালাম বা আদাব দিয়ে ধীরে ধীরে বাইরে বের হয়ে আসবেন।

 

ভাইভা বোর্ডে কীভাবে বসবেন ও কথা বলবেন?

অনুমতি নিয়ে ভাইবা রুমে প্রবেশ করে সুন্দারভাবে সালাম বা আদাব দিবেন। পরীক্ষকগণ যদি আপনাকে বসতে বলে তাহলে বসবেন, না হলে অনুমতি নিয়ে বসবেন। বসার সময় সাবধানে বসবেন যেন চেয়ারের শব্দ না হয়। চেয়ারে মেরুদন্ড সোজা করে বসবেন। হাত কোলের উপর রাখবেন। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় হাত নাড়িয়ে বা টেবিলের উপর হাত রেখে উত্তর দেওয়া যাবেনা। মাথা নিচু করে বা বাইরের দিকে তাকিও উত্তর দেওয়া যাবেনা। উত্তর দিতে হবে প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে। তবে উত্তর যদি দীর্ঘ হয় তাহলে বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের দিকেও চোখ রাখতে হবে। উত্তর দেওয়ার সময় অতিরিক্ত উচ্চস্বরে বা মৃদু স্বরে না বলে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় মৌখিক পরীক্ষায় উত্তর দেওয়ার সময় কথা বলার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা পরিহার করে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হবে।

 ভাইভা ড্রেস কোড

মৌখিক পরীক্ষার পোশাক কেমন হবে?

মৌখিক পরীক্ষায় পোশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভাইবা বোর্ডের পরীক্ষকগণ আপনাকে দেখে প্রথম ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই আপনার সম্পর্কে একটি ধারনা তৈরী করে নিবে। তাই ভাইভা বোর্ডে আপনার নিজেকে স্মার্ট ভাবে উপস্থান করতে হবে। কথায় আছে আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। তবে কোনভাবেই ওভার স্মার্ট হওয়া যাবে না। ছেলেদের জন্য ফরমাল ফুল শার্ট, ফরমাল প্যান্ট ও কালো সুজ পরতে পারেন। খেয়াল রাখবেন সুজের রং এবং বেল্টের রং যেন একই হয়। শার্ট অবশ্যই ইন করবেন। টাই থাকলে ভালো, তবে না হলেও তেমন কোনো সমস্যা নেই। শীতকালে ভাইভা দেওয়ার সময় সুট-কোট পরতে পারেন। তবে গ্রীষ্মকালে অবশ্যই না। ভাইভা বোর্ডে জিন্স প্যান্ট বা হাফ শার্ট, ফকুয়া, টি-শার্ট পরা উচিৎ নয়। 

মেয়েদের জন্য ভাইভার ড্রেসআপের ক্ষেত্রে মার্জিত রংয়ের শাড়ি পরতে পারেন। কেউ চাইলে সালোয়ার-কামিজও পরতে পারেন। তবে তা যেন মার্জিত, রুচিসম্মত রং এবং ডিজাইনের হয়। অতিরিক্ত কারুকাজ যুক্ত পোশাক ব্যবহার না করাই ভলো। জুতো শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙেগ মিলিয়ে পরতে পারলে ভালো হয়। তবে হাই হিল না পড়া ভালো। এমন জুতো পরবেন যেট হাটার সময় শব্দ না হয়। স্বাভাকি কানের দুল এবং গলায় চেইন পরতে পারেন। আপনি চাইলে হালকা মেকআপ ও হালকা লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। কেউ চাইলে বোরকা ও হিজাব পরে যেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে মুখমন্ডল উন্মুক্ত রাখতে হবে।


মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

মৌখিক পরীক্ষার আগের দিন আপনার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে প্রবেশপত্র, সার্টিফেকেট, মার্কশীট, প্রশংসাপত্র, নাগরিকত্ব সনদপত্র, চারিত্রিক সনদপত্র, অভিজ্ঞাতার সনদপত্র (যদি থাকে), অনলাইনে আবেদন করা হলে আবেদনের কপি ইত্যাদি সকল কাগজ গুছিয়ে একটি সুন্দর ফাইলে রাখতে হবে। যাতে ভাইভার দিনে কোনো কাগজ খুঁজতে গিয়ে সময় অপচয় না হয়। আবার কোন কাগজ খুঁজে না পাওয়া গেলে মাথার উচর চাপ পড়ে ফলে ভাইভা খারাপ হতে পারে। তাই পরীক্ষার আগের দিনই সব গুছিয়ে রাখুন।


 মৌখিক পরীক্ষায় করণীয়

 

ভাইভার দিন সময়মত উপস্থিত হওয়া

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হওয়া উচিত। কোন ভাবেই দেরি করে উপস্থিত হওয়া যাবেনা। সময়মত উপস্থিত হতে না পারাটাই আপনার অযোগ্যতা প্রমানের জন্য যথেষ্ট। তাই ভাইভার দিন যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হবেন। চেষ্টা করবেন ভাইবা শুরুর কমপক্ষে আধাঘন্টা আগে উপস্থিত হওয়ার। তবে অনেকে আবার আগে পৌছে যে প্রার্থী তার আগে ভাইবা দিয়ে বের হয় তার পিছনে হুমরি খেয়ে পরে, কেমন হলো? কি জিজ্ঞাসা করল? ইত্যাদি নিয়ে। সেটি করাও উচিত নয়। কারণ আগের প্রার্থীকে যা জিজ্ঞাসা করেছে আপনাকে তা জিজ্ঞাসা করা হবেনা। তাই নিজের প্রস্তুতি নিয়েই থাকুন। পারলে আপনার পূর্বের পড়া রিভিশন দিতে পারেন।

এভাবে ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিলে আপনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ভাইভা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ভাইভা, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির ভাইভাসহ যে কোন ভাইভায় সফল হতে পারবেন। সকলের জন্য শুভকামনা।


সরকারি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির জন্য কি পড়বেন?



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ