Recents in Beach

#

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও ১০০% কার্যকরী উপায় সোনাপাতা

 

কোষ্ঠকাঠিন্য-থেকে-মুক্তির-প্রাকৃতিক-উপায়-সোনাপাতা

কোষ্ঠকাঠিন্য একটা যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর সমস্যা, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। এটি খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগের সময় রক্তপাত এবং পাইলস ও এনাল ফিশারের মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন দেখে নেই কোনো ঔষধ ছাড়া একদম প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


    কোষ্ঠকাঠিন্য কী

    পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।  যদি দিনের পর দিন পায়খানা করতে অসুবিধা হয় এবং মল শক্ত, শুষ্ক ও নিস্কাশনে কষ্টসাধ্য হয়, তখন তাকে কোষ্টকাঠিন্য বলে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় যদি যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়ার পরও সপ্তাহে ২ বারের কম পায়খানা হয় তাহলেই সেটি কোষ্টকাঠিন্য।


    কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ

    ১. পায়খানা শুকনো, শক্ত চাকার মত হবে;

    ২. মলত্যাগের সময় মলাশয়ে ব্যথা হবে;

    ৩. পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হবে

    ৪. পেট ফুলে যেতে পারে ও কিছুক্ষণ পর পর বায়ু ত্যাগ হতে পারে;

    ৫. পেটে ব্যথা হওয়া, পেট ফাঁপা লাগা, বা বমি বমি ভাব হওয়া এবং খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া।


    কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়? 

    বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হলো: 
    ১. খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকা 
    ২. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা
    ৩. শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
    ৪. পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা
    ৫. মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা 
    ৬. ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

    কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে যে সমস্যা হয়


    দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আমাদের শরীরে যে সকল সমস্যা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো
    কোষ্ঠকাঠিন্য হলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
    কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে আমাদের শরীরে অবসাদ বা ক্লান্তি অনুভব হয়।
    দীর্ঘদিন ধরে পায়খানা নরম না হলে চোখ ব্যাথা হয় এবং চোখের নিচে কালি পরে।
    অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে কোমরে ব্যথা হয়।
    রেকটাল প্রোরাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে।
    দীর্ঘ সময় ধরে কষ্টকাঠিন্য হলে শরীরে অলসতা বৃদ্ধি পায় এবং মনোযোগ কমতে থাকে।
    দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দিলে প্রসাবের সমস্যা দেখা দেয়।
    দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য শরীরে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
    এনাল ফিশার ও পাইলস হতে পারে।
    কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ক্ষুধামন্দ, মুখে দুর্গন্ধ এবং পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার মহৌষধ সোনাপাতা

    সোনাপাতা বা সোনামুখী পাতাকে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের মহৌষধ বলা হয়। সোনা পাতায় বিদ্যমান এনথ্রানয়েড রেচক হিসেবে উদ্দীপনা যোগায় এর কারণ হল সেনোসাইড এবং রেইন এনথ্রোন হজম প্রক্রিয়াকে প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। 
    রেচক (Laxative effect) বা শীতলকারক হওয়ার ফলে বৃহদন্তে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয় যা ইনটেস্টাইন্যাল উপাদান গুলোর ভলিউম এবং চাপ বৃদ্ধি করে। এতে কোলনের সঞ্চালন উদ্দীপিত হয়। ফলে খুব অল্প সময়ে এবং খুব সহজেই মল দেহ থেকে বাইরে নিষ্কাষিত হয়। এছাড়া পায়ু পথের বিভিন্ন সমর্সা দূর করতে,  অর্শের সমস্যায়, গ্যাষ্টিকের সমস্যায়, অপারেশনের পূর্বে ও পরে পেট পরিষ্কার রাখতে সোনাপাতা ব্যবহার করা হয়।

    সোনাপাতা- কোষ্ঠকাঠিন্য-দুরকরার-মহৌষধ

    সোনাপাতার পরিচিতি

    বাংলা নাম: সোনা পাতা, সোনামুখী, ইংরেজী নাম: Senna, Tinnevelly Senna, বৈজ্ঞানিক নাম: Cassia angustifolia Vahl. এর ব্যবহার্য অংশ হলো পাতা, ফুল ও ফল। তবে পাতার ব্যবহারই বেশী। গাছ বীরুৎ জাতীয়। পাতা দেখতে অনেকটা মেহেদী পাতার মত। পাতার রং কাঁচা অবস্থায় হলুদাভ সবুজ এবং শুকনো হলে হলুদাভ সোনালী বর্ণ হয়। অক্ষের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ মাথার হলুদ রঙের ফুল ফোঁটে। 

    সোনাপাতা উষ্ণমন্ডলীয় দেশ সমূহে বেশী জন্মে। সুদান, সোমালিয়া, সুন্ধুপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও দক্ষিণ ভারতে বাণিজ্যিক ভবে চাষ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে সহ উপমাহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সোনাপাতা বেশ দেখা যায়। আরব দেশের জঙ্গলে সোনাপাতা প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে।

    সোনাপাতার পুষ্টিগুন

    সোনাপাতায় যে সব রাসায়নিক উপাদান আছে তা হলো ১.৫-৩% হাইড্রোজায়ানথ্রাসিন গ্লাইকোসাইড, প্রধানত সেনোসাইড এ এবং বি যা রেইন-হায়ানথ্রোন এবং কম পরিমাণে সেনোসাইড সি এবং ডি যা রেইন-এলো-ইমোডিন-হেটেরোডায়ানথ্রোন, ন্যাপথলিন গ্লাইকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েড (কেম্পফেরল এবং আইসো-রামানিটিন এর ডেরিভেটিভ), ১০-১২% খনিজ উপাদান, ৭-১০% মিউসিলেজ(গ্যালাক্টোজ, এরাবিনোজ, রামনোজ এবং গ্যালাকটিউরোনিক এসিড), প্রায় ৮% পলিঅল (পিনিটল); সুগার(গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ) এবং রেজিন।

    সোনাপাতা সেবনের নিয়ম

    কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তির জন্য সোনাপাতার শুকনো পাতা, লিকুইড বা শুকনো পাউডার আকারে ব্যবহার করা যায়। শুকনো পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিদিন রাতে ৮-১০ টি পাতা একগ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে হবে। আবার কুসম গরম পানিতেও কয়েকটি পাতা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখেও সেবন করা যায়। এতে মল দ্রুত নরম হবে।

    পাউডার ব্যবারের ক্ষেত্রে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ মিলিগ্রাম বা চা চামচে ১ চামচ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। আবার সোনা পাতার গুড়ো আপনি চায়ের সাথেও খেতে পারেন। তবে সোনা পাতা সপ্তাহে ২থেকে ৩ দিন এবং মাসে ১০ থেকে ১২ দিনের বেশি সেবন না করাই ভালো। 

    সোনাপাতা কোথায় পাওয়া যায়?

    বাংলাদেশে সোনা পাতা বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা না হলেও বিভিন্ন উচু জায়গায় ও বনজঙ্গলে সোনাপাতার গাছ পাওয়া যায়। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন সুপারশপে সোনাপাতা গুড়ো পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইনেও সোনাপাতা বিক্রি করে থাকে। আবার আপনি স্থানীয় বাকালি দোকানেও সোনাপাতা গুড়ো ও শুকনো পাতা পাবেন।

    সোনাপাতা সেবনের সতর্কতা

    সোনা পাতা প্রাকৃতিক জিনিস হলেও এটি ব্যবহারে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বর করা প্রয়োজন। অন্ত্রের কোন রোগ থাকলে যেমন-অন্ত্রের প্রদাহ, আলসার, এপেনহিসাইটিস ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে সোনাপাতা ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এবং ৫ বছরের নিচের বাচ্চদের সোনা পাতা ব্যবহার করা উচিত নয়। সোনাপাতা খাওয়ার ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে বাথরুমের আশেপাশে থাকতে হবে এবং এটি সেবনের পরে দূরের ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো।

    সোনাপাতার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

    উচ্চ মাত্রায় দীর্ঘদিন ধরে সোনা পাতা ব্যবহার করলে শরীরে পটাশিয়াম লেভেল কমে যায়। পটাশিয়াম লেভেল কমে গেলে এই অবস্থাকে বলে হাইপোক্যালিমিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে সোনা পাতা ব্যবহার করলে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, হাড় বা গোস্তপেশী দূর্বল হয়ে পরে এবং ক্ষধা কমে যাওয়ার করণে শরীরের ওজন কমে যেতে পারে। এছাড়া উচ্চ মাত্রায় ব্যবহারের ফলে পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে।


    তাছাড়াও আমরা আমাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তণের মাধ্যমেও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি।  আমাদের প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি এবং ফল খেতে হবে।  যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে।  বিশেষ করে আমরা যদি মৌসুমী ফলের সময় ফল খাই তাহলে শরীরের আঁশের অভাব বেশি কমাবে। সবজির ভেতরে ঢেঁড়স, পালং শাক, পুঁই শাক, কচুমুখিতে প্রচুর আঁশ থাকে।  এগুলো যদি প্রচুর পরিমাণে খাই তাহলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে। 

    আবার কিছু কিছু খাবার আছে আমাদের কম করে খেতে হবে। যেমন: গরু- খাসির মাংস, ফাস্টফুড , চিকেন ফ্রাই, আলু ফ্রাই, চিপস ইত্যাদি।



    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ