ডিজিটাল ক্রিয়েটর (Digital Creator)
ইদানিং আমরা নতুন একটি শব্দের সাথে খুব বেশি পরিচিত হচ্ছি তা হলো ‘ডিজিটাল ক্রিয়েটর’(Digital Creator)। ফেসবুকের কাল্যাণে আমরা এখন অনেকেই ডিজিটাল ক্রিয়েটর। হাসির ছলে বলতে গেলে বলতে হয় ফেসবুক এখন আমাদের বেকার সমাজের সুন্দর একটা পরিচিতি দিয়েছে। আমরা এখন আর কেউ বেকার নই। প্রত্যেকে ডিজিটাল ক্রিয়েটর বা ডিজিটাল স্রষ্টা। এখন আসুন ভালোভাবে জানি এই নতুন শব্দ সম্পর্কে।
ডিজিটাল ক্রিয়েটর কী? (What is Digital Creator?)
সংক্ষেপে বলতে গেলে এর অর্থ দাড়ায় ইন্টারনেট বা অন্যন্যা ডিজিটাল
মিডিয়ার জন্য সামগ্রী তৈরি করা। ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা, ব্লগ লেখা, ইনস্টাগ্রামে
গল্প তৈরি, ইউটিউব ভিডিও ইত্যাদি যে কোনো কিছু হতে পারে। আপনি যদি এখন ডিজিটাল ক্রিয়েটর
হতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই অনলাইন ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি সম্পর্কে
ভালো ধারণা রাখতে হবে। কীভাবে এসব মাধ্যম ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে এসব মাধ্যমে কাজ
করতে হয়, কীভাবে দর্শক বা কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ রাখা যায় ইত্যাদি বিষয়ে ভালো দক্ষতা
থাকতে হবে।
একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর এর আয় কত?
What is the income of a digital creator?
আপনি যদি একজন ডিজিটাল স্রষ্টা (Digital Creator) হয়ে থাকেন তাহলে বিভিন্ন
উপায়ে অনেক ভালো পরিমাণ আয় করতে পারেন। আপনি আপনার নিজের পন্য বিক্রি করতে পারেন,
অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে অন্যের পন্য বিক্রয় করে কমিশন পেতে পারেন এমনকি
স্পন্সর করা সামগ্রী বা ব্র্যান্ড ডিল করে আয় করতে পারেন।
একটি রিপোর্টে দেখা গেছে যে, ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের
গড় ইনকান ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। আশার কথা এটি একটি লাভজন শিল্প
যা অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর কী কী কাজ করেন?
What is digital Creation?
একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর মূলত একজন কন্টেন্ট নির্মাতা বা Digital content
Creator। যারা শুধুমাত্র অনলাইন বা ডিজিটাল মিডিয়ার জন্য কন্টেন্ট তৈরি করে। ডিজিটাল
ক্রিয়েটরের কাজ হল ডিজিটাল সামগ্রী তৈরি করা। একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর নিম্নলিখিত
কাজগুলো করতে পারেন:
১। লিখিত সামগ্রী তৈরি করা যেমন ব্লগ, কন্টেন্ট, কপিরাইটিং ইত্যাদি।
২। ভিডিও সামগ্রী তৈরি করা যেমন ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও ইত্যাদি।
৩। ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট তৈরি করা ছাড়াও আরো অনেক কাজ করতে পারেন।
How to Become a Successful Digital Creator in Bangla
একজন সফল ডিজিটাল ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন
একজন সফল ডিজিটাল ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন তা নিম্নে তুলো ধরা
হলো:
১. অনবদ্য গবেষণা দক্ষতা
একজন সফল ডিজিটাল ক্রিয়েটর এর জন্য গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে
বিষয়ে কাজ করতে চান তার উপর ধারণা থাকার পাশাপাশি আপনাকে জানতে হবে আপনার দর্শক বা
কাস্টমার কারা, তাদের চাহিদা কী, তাদের আগ্রহ এবং প্রত্যাশাগুলো সম্পর্কে ।
তাছাড়া আপনার প্রতিযোগীর বিষয়েও গবেষণা করা উচিত। কি পরিমাণ লোক ইতিমধ্যে
আপনার সেবাটি দিচ্ছে? তারা কি ধরনের সামগ্রী তৈরি করে? তারা কত ঘন ঘন নতুন সামগ্রী
প্রকাশ করে? সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের কত ফলোয়ার আছে ইত্যাদি সম্পর্কেও ভালো ধারণা
রাখতে হবে।
২. এসইও (SEO) এর সাথে পরিচিতি
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) হল বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে আপনার সামগ্রী
অপটিমাইজ করার প্রক্রিয়া। এটি ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ
এর মাধ্যমে মানুষকে আপনার পন্য বা সেবা খুজে পেতে সাহায্য করবে। অর্থাৎ যত বেশি
লোক আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে, আপনার সমগ্রীর সাথে পরিচিত হবে, ততই আপনার পন্য বা
সেবার বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে।
কীওয়ার্ড রিসার্চ হলো আপনার দর্শক বা কাস্টমাররা কী খুঁজেছেন তা বোঝার জন্য
একটি অন্যতম উপায়। যা আপনাকে নতুন বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দিবে।
৩. টার্গেট দর্শক বা
কাস্টমার সম্পর্কে ধারণা
একজন সফল ডিজিটাল ক্রিয়েটর এর জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার
দর্শক বা কাস্টমার কারা? তাদের পছন্দ কী? শুধুমাত্র তা জানলে হবে না। আপনাকে আরো
জানতে হবে তাদের অপছন্দ এবং কি কি বিষয় তাদের অনুপ্রাণিত করে।
দর্শক বা কাস্টমারদের অসুবিধা সম্পর্কেও আপনার ধারণা রাখতে হবে এবং আপনার পন্য
বা সেবা কীভাবে তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করবে ইত্যাদি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
তাদের বিনোদনমূলক, কৌতুহলী বা দরকরি বিষয়গুলি সনাক্ত করাও আপনার দায়িত্ব। তাই
আপনার ডিজিটাল বিষয়বস্তু তৈরিতে এ সকল ধারণা ব্যবহার করেত পারেন।
৪. আপার ব্র্যান্ড তৈরি করা এবং এর শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা
একজন সফল ডিজিটাল ক্রিয়েটর হয়ে ওঠার জন্য আপনার নিজের একটি ব্র্যান্ড তৈরি
করতে হবে। আপনার পন্য বা সেবার উপর ভিক্তি করে সঠিক ব্র্যান্ড তৈরি করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কীভাবে আপনি আপনার নিজের ব্র্যান্ডকে বাজারজাত করবেন এবং এর
সাফল্য পরিমাফ করবেন তাও আপনাকে নির্ধাণ করতে হবে। সেই সাথে আপানার শক্তির জায়গা ও
দুর্বলতার জায়গা আপনাকে চিহ্নিত করতে হবে। আপনার কোন দুর্বলতা থাকলে কীভাবে তা দূর
করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. ধারাবাহিকতা
ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের জন্য ধারাবাহিকতা অত্যন্ত আবশ্যিক একটি বিষয়। এটি আপনার
ব্র্যান্ড সম্পর্কে দর্শক বা কাস্টমারকে অগ্রহী করার অন্যতম উপায়। আপনি ধারাবাহিক
না হলে কাস্টমার অন্য কোথাও তাদের পছন্দের জিনিস খুঁজতে পারেন। তাছাড়া আপনার সেবার
ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বোচ্চ মান নির্ধারণ করতে হবে। আপনার বিষয়বস্তু যদি নিম্নমানের
হয় বা অ-তথ্যপূর্ণ হয় তাহলে লোকেরা দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
এছাড়াও ডিজিটাল ক্রিয়েটর হিসেবে সফল হতে হলে আপনাকে আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে
জানতে হবে। যেমন- মৌলিক ভিডিও সম্পাদনা বা গ্রাফিক তৈরি করা, বেসিক লগো ডিজাইন,
বেসিক ওয়েবসাইট তৈরি।
একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর হিসেবে আপনার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে উপক্ষো করা উচিত
হয়। কেউ যদি আপনার ভিডিও বা আপনা পোস্ট পছন্দ না করে , তাহলে ভেঙ্গে না পড়ে পুনরায়
চেষ্টা করুন এবং এটিতে কী ভুল রয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। অবশ্যই আপনি
সফল হতে পারবেন।
ডিজিটাল ক্রিয়েটর হওয়ার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
আপনি একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তার
আগে আপনার সঠিক সরঞ্জাম আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। যে সকল সরঞ্জাম প্রয়োজন তাহল
একটি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা,একটি মাইক্রোফোন। মোটামুটি
এসকল সরঞ্জাম থাকলে আপনি আপনার কাজ শুরু করতে পারেন।
ডিজিটাল ক্রিয়েটর (Digital Creator) হিসেবে কোথায় কাজ করবেন?
আপনি যদি সৃজনশীল কাজের সাথে জড়িত একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর হয়ে
থাকেন তাহলে আপনি ক্রিয়েটিভ মার্কেট, গুমরোড, Etsy এর মত সাইটে আপনার পন্য বা সেবা
বিক্রি করার জন্য ডিজিটাল পন্য তৈরি করতে পারেন। আপনি ডাউনলোড যোগ্য টেমপ্লেট, ইবুক,
ওয়ার্কবুক, মুদ্রণযোগ্য ইত্যাদি ডিজিটাল পন্য তৈরি করতে পারেন।
আপনার যদি লেখালেখির ভালো দক্ষতা থাকে তাহলে নিজের একটি ব্লগ
সাইট খুলে সেখানে বিভিন্ন কন্টেন্ট লিখতে পারেন। এখানে আপনি যত খুশি ব্লগ পোস্ট লিখতে
পারেন। এটি আপনার লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে আপনার সাইটের ভিজিটর
বৃদ্ধি পাবে এবং এখান থেকে অর্থ উপার্জন শুরু করতে পারবেন। আপনি নিজের ডোমেইন এবং হোস্টিং
নিয়েও শুরু করতে পারেন অথবা গুগলের ফ্রি সার্ভিস Blogger.com থেকেও ফ্রিতে একাউন্ট
খুলে শুরু করতে পারেন।
আপনি একটি You Tube চ্যানেল তৈরি করতে পারেন। যেখানে আপনার
দক্ষতা শেয়ার করতে পারবেন এবং আপনার ব্র্যান্ড এর প্রচার ও প্রসার ঘটাতে পারেন। যা
আপনার অনলাইন ব্যবসা তথা ডিজিটাল পন্য বিক্রয়ের সেরা জায়গা হতে পারে। You Tube চ্যানেল
তৈরি করতে আপনাকে কোন খরচ করতে হবে না।
এবার পদক্ষেপ নিন!
আপনাকে এবার প্রথমে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনি যদি একজন সফল ডিজিটাল
ক্রিয়েটর হতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার মনের কথা শুনতে হবে। আপনার উৎসাহের
বিষয় এবং দক্ষতা সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যদি উৎসাহি না হন তাহলে নিয়মিতভাবে
ডিজিটাল সামগ্রী তৈরি করা আপনার জন্য কঠিন হবে।
আপনার কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। প্রতিটি কাজ করার সময় আবেগ দিয়ে করতে
হবে যাতে আপনার তৈরি পন্যটি সবার সেরা হয়। কারণ কোনো কিছু সৃষ্টিকরা সহজ কাজ নয়।
আপনি যদি শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য ডিজিটাল ক্রিয়েটর হতে চান তাহলে আমার মতামত এর
বিরুদ্ধে। একজন স্রষ্টা হওয়া অনেক কঠিক কাজ। এর জন্য কঠোর পরিশ্রম, প্রতিশ্রুতি ও
আবেগ প্রয়োজন। ভালোবাসা দিয়ে, আবেগ দিয়ে লেগে থাকুন অবশ্যই সফল হবেন।
0 মন্তব্যসমূহ