Recents in Beach

#

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ের জানা-অজানা সকল তথ্য

 আমাদের পঞ্চগড় জেলা

Sher-e-Bangla_park_panchagarh_District


পঞ্চগড়ের ভৌগলিক অবস্থান

পঞ্চগড় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রংপুর বিভাগের একটি প্রাচীন জনপদ। এটি বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা। পঞ্চগড় জেলার আয়তন ১৪০৪.৬২ বর্গ কি.মি. বা ৫৪২ বর্গমাইল। পঞ্চগড় জেলার পূর্বে নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যোর জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার , উত্তরে দার্জিলিং এবং দক্ষিণে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় স্যার সিলি রেডক্লিফের নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলার তিনদিকে প্রায় ১৮০ মাইল বা ২৮৮ কি.মি. জুড়ে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ১ নং আসন।

 

 

    পঞ্চগড় জেলার নামকারণের ইতিহাস

    অনেকে মনে করে থাকেন যে, প্রচীনকালে পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যোর অন্তর্গত “পঞ্চনগরী” নামে একটি অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী পরিবর্তিত হয়ে পঞ্চগড় হিসেবে পরিচিত হয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন পঞ্চগৌড়ের একটি অংশ হিসেবে প্রাকৃত ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পঞ্চগড়ের নামকরণের সম্ভাবনা থেকে যায়। অর্থাৎ পঞ্চগৌড়>পঞ্চগোড়>পঞ্চগড়। অবশ্য সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এই অঞ্চলের পাঁচটি গড়ের অবস্থানের কারণেই “পঞ্চগড়” নামের উৎপত্তি হয়। পঞ্চগড়ের পাঁচটি গড় হলো : ভিতরগড়, মিরগড়, রাজনগড়, হোসেনগড় ও দেবনগড়। আবার কেউ কেউ ভিন্ন মত প্রকাশ করেন, তা হলো পঞ্চ শব্দের অর্থ পাঁচ আর গড় শব্দের অর্থ বন বা জঙ্গল। ভারত বিভাগের আগে এই অঞ্চলে প্রচুর বন জঙ্গল ছিল। তা থেকেও এ এলাকার নাম “পঞ্চগড়” হতে পারে।

     

    ভারত থেকে বিভক্ত হওয়া ও 
    আধুনিক পঞ্চগড় জেলা গঠন

    ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পঞ্চগড় থানাটি দিনাজপুর জেলার ঠাকরগাঁও মহকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৮০ সালে ১ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও মহকুমার ৫টি থানা তেতুলিয়া, পঞ্চগড়, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হয়। মহকুমার সদর দপ্তর পঞ্চগড় থানায় স্থাপিত হয়। পঞ্চগড় মহকুমার প্রথম প্রশাসক ছিলেন সৈয়দ আব্দুর রশিদ। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। পঞ্চগড় জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আ.স.ম আব্দুল হালিম।

    মুক্তিযুদ্ধে পঞ্চগড়

    দেশের মোট ৪ টি মুক্তাঞ্চলের মধ্যে পঞ্চগড় জেলা ছিল একটি। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন  সময় পঞ্চগড় যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও মহমুকার অন্তর্গত পঞ্চগড় ৬ নং সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত ছিল। এই সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা হিসারে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম। অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম, অ্যাড. কমর উদ্দিন আহমেদ (এমএলএ), অ্যাড. মোশারফ হোসেন চৌধুরী (এমএলএ), কাজী হাবিবর রহমান, আব্দুল জব্বার প্রমুখের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাগণ ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেসময় এই এলাকায় ৭টি কোম্পানির অধীনে ৪০টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনী পঞ্চগড় দখল করে নিয়ে পঞ্চগড় শহরে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ২৮ নভেম্বর মিত্রবাহিনীর সহযোগীতায় মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের উপর জোরালো আক্রমণ করে। এর ফলে ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় হানাদার মুক্ত হয়।

    পঞ্চগড়ের উপজেলা ও ইউনিয়ন সমূহ

    ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তেতুঁলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে পঞ্চগড় জেলা গঠিত হয়। নিম্নে উপজেলা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য তুলে ধরা হলো:

    তেতুঁলিয়া উপজেলা: তেতুঁলিয়া উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ হলো বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন, তিরনইহাট ইউনিয়ন, তেতুলিয়া ইউনিয়ন,শালবাহান ইউনিয়ন, বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন, ভজনপুর ইউনিয়ন ও দেবনগর ইউনিয়ন।

    পঞ্চগড় সদর উপজেলাপঞ্চগড় সদর উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ হলো চাকলাহাট ইউনিয়ন, সাতমেরা ইউনিয়ন, অমরখানা ইউনিয়ন, হাড়িভাসা ইউনিয়ন, কাজলদিঘি ইউনিয়ন, ধাক্কামারা ইউনিয়ন, গড়িনাবাড়ী ইউনিয়ন, মাগুরা ইউনিয়ন, পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন ও হাফিজাবাদ ইউনিয়ন।

    আটোয়ারী উপজেলা : আটোয়ারী উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ হলো তোড়িয়া ইউনিয়ন, আলোয়াখোয়া ইউনিয়ন, রাধানগর ইউনিয়ন, ধামোর ইউনিয়ন, মির্জাপুর ইউনিয়ন ও বলরামপুর ইউনিয়ন।

    বোদা উপজেলাবোদা উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ হলো বেংহারি ইউনিয়ন, ময়দানদিঘি ইউনিয়ন, ঝলইশালশিরি ইউনিয়ন, সাকোয়া ইউনিয়ন, পাঁচপীর ইউনিয়ন, বোদা ইউনিয়ন, কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন, মাড়েয়া ইউনিয়ন, বড়শশী ইউনিয়ন ও চন্দনবাড়ী ইউনিয়ন।

    দেবীগঞ্জ উপজেলাদেবীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ হলো দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়ন, দন্ডপাল ইউনিয়ন, শালডাঙ্গা ইউনিয়ন, টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন, চিলাহাটি ইউনিয়ন, সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন, পামুলী ইউনিয়ন, দেবীডুবা ইউনিয়ন ও চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়ন।

     

    পঞ্চগড়ের দর্শনীয় স্থান

    প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের নীলাভূমি আমাদের পঞ্চগড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। যা ভ্রমণপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে বার বার। পঞ্চগড় জেলার ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, তেতুলিয়া ডাকবাংলো, মহারাজার দিঘী, রকস্ মিউজিয়াম, বারো আউলিয়া মাজার, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, গোলকধাম মন্দির, মিরগড়, ভিতরগড় প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য।

     

    বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট

    Banglabandha-Zero-Point


    বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের অন্তর্গত সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়া উপজেলার ০১ নং বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর ও বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট অবস্থিত। বাংলাবান্ধা দেশের একমাত্র স্থল বন্দর যার মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমালয়ের পাদদেশে মহানন্দা নদীর তীরবর্তী ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রায় ১০ একর জমিতে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর নির্মিত হয়।


    মহারাজার দিঘী

    পঞ্চগড় সদর থেকে ১৫ কি.মি দূরে অমরখানা ইউনিয়নে ঐতিহাসিক মাহারাজার দিঘী অবস্থিত। ধারনা করা হয়, ১৫০০ বছরের প্রাচীন ভিতরগড় রাজ্যের মহারাজা পৃথু তার রাজত্বকালীন সময়ে এই দিঘীটি খনন করেন। বিশালাকার এই জলাশয়ের পাড়সহ মোট আয়তন প্রায় ৩২০০ বর্গগজ এবং পানির গভীরতা প্রায় ৪৫ ফুট। চারপাশে সবুজ গাছপালায় ঘেরা। এই দিঘীর মোট ১০টি ঘাট রয়েছে। কথিত আছে, পৃথু রাজা তার পরিবার পরিজন ও ধনরত্ম নিয়ে “কীচক” নামক এক নিম্নশ্রণীর সংস্পর্শে ধর্মনাশের ভয়ে এই দিঘীতে আত্মহত্যা করেছিলেন।

     

    তেঁতুলিয়া থেকে উপভোগ করুন কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য

    kanchenjunga-Banglabandha-panchagarh


    বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্গার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। হেমন্তকাল ও শীতকালে সুন্দর ভাবে কাঞ্চনজঙ্গার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও তেঁতুলিয়ার মত সবচেয়ে ভালোভাবে আর কোথা থেকেও দেখা যায় না। তবে সারাবছর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না। অক্টোবরের শুরু থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় বরফে ঢাকা  কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।

     

    পঞ্চগড় কিসর জন্য বিখ্যাত?

    পঞ্চগড় মূলক অর্গানিক চা চাষের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশে অর্গানিক চা চাষের কথা উঠলেই প্রথমে পঞ্চগড় জেলার নাম মাথায় আসবে। শুরু থেকেই পঞ্চগড় জেলায় অর্গানিক চা উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়ায় বর্তমানে অর্গানিক চা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে পঞ্চগড় জেলা।

    বাংলাবন্ধা স্থল বন্দরও পঞ্চগড়কে বিখ্যাত করেছে। কারণ এর মাধ্যমে একই সাথে ভারত, নেপাল ও ভুটান তিনটি দেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। আবার হিমালয়ের কোলঘেষে অবস্থিত হওয়ায় হিমালয় কন্যা হিসেবও বিশেষ পরিচিত পঞ্চগড়।


    চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় সফল হওয়ার জাদুকরী উপায়


    তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির চাকরির পরীক্ষার জন্য কী কী পড়তে হবে?


     

     

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ